Friday, September 7, 2018

সাফল্য


ছোট বেলা থেকেই খুব দুষ্টু ছিলাম। কথায় বলে দুষ্টু ছেলে মেয়েরা নাকী অনেক মেধাবী হয়। কিন্তু তা আমার বেলায় পুরো উল্টোটা ছিল। আমি খুব একটা ভাল ছাত্রী কখোনই ছিলাম না। সেই তুলনায় আমার ছোট ভাই, দীপ্ত(বর্তমানে পটুয়াখালী প্রযুক্তিতে পড়াশোনা করছে) খুব ভাল ছাত্র ছিল। ক্লাসে ফার্স্ট হতো, স্বভাবেও শান্তশিষ্ট(আমার সামনে লেজবিশিষ্ট), সবসময় শিক্ষকদের সুনজরে থাকতো। আর আমি একে তো ভাল ছাত্রী না তার উপরে অসম্ভব চঞ্চল, স্কুলে ছেলেদের সাথে মারামারি করতাম(মেয়েদের সাথেও মারামারি করেছি তবে সেটা হাই স্কুলে উঠে), শিক্ষকদের সুনজরে ছিলাম না কখনো। প্রত্যেকদিন কোন না কোন কারণে শাস্তি পাওয়াটা ছিল আমার দৈনন্দিন জীবনের অংশ। 

যা হোক, আমার ছোট খাটো দোষগুলো অনেক উল্লেখযোগ্যভাবে সবার নজরে পড়তো একটাই কারণে, সেই কারণটি হল আমি সবার বড়, সেই তুলনায় আমার ছোট ভাই বোনেরা আমার চেয়ে অনেক বেশি লক্ষ্মী... তাই ছোট বেলা থেকেই তুলনাটা বড্ড বেশি দেখে ফেলেছি। অ-নেক আগের একটা ছোট্ট ঘটনা বলি, একদিন এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছি, আমার একজন মামাও আমাদের দেখতে সেখানে যায় সেদিন, তো মামা আমাদের দেখে জিজ্ঞাস করে আমরা কে কোন ক্লাসে পড়ি, তখন আমরা বলি কে কোন ক্লাসে, আমি ক্লাস সিক্সে, দীপ্ত ক্লাস ফাইভে; তো যাদের বাসায় গিয়েছি তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন, আগামীবার দেখবেন মিমিও ক্লাস সিক্সে দীপ্তও ক্লাস সিক্সে...... আমরা সবাই থতমত খেয়ে গেলাম অমন একটা কথায়। যা হোক, ওইদিন নিশ্চিত হলাম যে আমি যে খারাপ স্টুডেন্ট তা মোটামোটি জগৎ জেনে গিয়েছে। ক্লাস ফাইভে থাকতে অংকে একবার ফেইল করেছিলাম,  ক্লাস সেভেনেও ক্লাস টিচারের কোন এক ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে গণিতে ফেইল করি(ওই ঘটনা আরেকদিন বলবো), এই যা...... কিন্তু পুরো স্কুল লাইফে কখনো কোন ক্লাসে ড্রপ করি নি। 

আত্মীয় স্বজনেরা ফোন করে সবসময় যে যার ছেলে মেয়ে নিয়ে নানান সুখবর শোনাতো বাবা-মাকে, “আজ আমার মেয়ে ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছে, আমার ছেলে বিতর্ক প্রতিযোগীতায় চ্যাম্পিয়ান হয়েছে, আজ আমার মেয়ে আবৃত্তিতে ফার্স্ট হয়েছে, আজ আমার ছেলে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে” কিন্তু বাবা-মা আমাকে নিয়ে বলার মত কোন ভালো খবর, বা মনে রাখার মত কোন খবর শোনাতে পারতো না। এজন্য তারা ভেতরে ভেতরে খুব কষ্ট পেত, কিন্তু কখনো কিছু বলতো না। কিন্তু আমি বুঝতে পারতাম তাদের এই কষ্টটা। 

ক্লাস টেন এ থাকতে কিশোর আলো থেকে “স্বপ্নের গল্প লেখা” নামক একটা প্রতিযোগীতায় একটা পুরস্কার পাই। বাবা মা খুশির ঠেলায় সবাইকে ফোন দিয়ে বলার মত একটা সুখবর পেয়েছে আজ। কিন্তু আমি তাদের বললাম, কোন দরকার নাই কাওকে জানানোর, এটা এমন কোন সাফল্য না।
বাবা-মা বলে, “কি, এটা সাফল্য না? পুরা বাংলাদেশের মধ্যে এই প্রতিযোগীতায় মাত্র কয়েকজনকে পুরস্কার দিয়েছে, তো এটা বলবো না?”

তো আমি বললাম, “না, যেদিন পুরা দেশ আপনা আপনি জানবে আমার সাফল্যের কথা এবং আত্মীয় স্বজন দেশের আর দশটা মানুষের মতই আমার অর্জনের খবর জানতে পারবে, সেদিন মনে করবো যে হ্যা আমি কিছু করতে পেরেছি, আর সেই সাফল্য যদি নিজ দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে অর্জন করতে পারি তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মনে করবো নিজেকে" 


©All content on this blog is protected by copyright law. Unauthorized use, reproduction, or distribution of any articles without permission is strictly prohibited. Legal action may be taken against violators.

No comments:

Post a Comment

তুলনা

 তুলনা করে কথা বলাটা আমি প্রচন্ড ঘৃণা করি..... এই তুলনা করার মত ঘৃণ্য কাজ, ভাই-বোনের সম্পর্ক, বাবা-মায়ের সম্পর্ক, পৃথিবীর সব পবিত্র সম্পর্কক...