Saturday, September 15, 2018

মায়ের কাছে যাব

(মা দিবস নিয়ে একটি লেখা দু'বছর আগে প্রকাশিত হয় প্রথম আলোর ক্রোড়পত্র অধুনাতে। তা অনুরূপ তুলে দেওয়া হলো)
https://www.prothomalo.com/pachmisheli/article/855160/মায়ের-কাছে-যাব  
 
"মায়ের কাছে যাব"

ছোটবেলায় দুষ্টুমি আর মার বকুনি—এই দুটি বিষয় ছিল আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এত দুষ্টুমি করতাম যে নানা ধরনের দুর্ঘটনাও আমার দৈনন্দিন জীবনের অংশ হতে লাগল। পায়ে কাচ ফুঁড়ে যাওয়া, দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে হাত-পা ছিঁড়ে যাওয়া, পায়ে মরচে ধরা পেরেক ঢুকে যাওয়া ছিল আমার নিত্যসঙ্গী। দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর যখন ক্ষতবিক্ষত হয়ে মায়ের কাছে যেতাম, তখন মা আমার ক্ষতবিক্ষত ছোট্ট শরীরের ওপর দিতেন উত্তমমধ্যম। তীব্র ক্ষত তীব্রতর হতে থাকত। তাই মায়ের উত্তমমধ্যমের হাত থেকে রেহাই পেতে আস্তে আস্তে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মায়ের দৃষ্টির আড়ালে রাখতে লাগলাম। স্কুলের স্পোর্টস ডেতে প্রতিবার নাম লেখাতাম এবং আমার দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়াতে থাকতাম। স্পোর্টস ডেতে নানা খেলাধুলা শেষে যখন সবাই ব্যথায় কোকাতে থাকত, তখন তাদের মা ব্যথা উপশম করার জন্য পরম স্নেহের সঙ্গে হাত বুলিয়ে দিতেন। এ দৃশ্য দেখতাম আর দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম।

একদিন বেশ গুরুতর একটা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছিলাম। ক্লাস থ্রিতে পড়তাম তখন। স্কুলের ব্রেক টাইমে হাইবেঞ্চের ওপর উঠে দুষ্টুমি করছিলাম। হঠাৎ পা পিছলে মাটিতে পড়ে যাই। আমার বেঞ্চের ধাক্কায় আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে মোটা ছেলেটি (পরে শুনেছি থ্রিতে থাকতেই তার ওজন ছিল ৫০ কেজি) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমার বাঁ হাতের ওপর বেঞ্চসমেত পড়ে গেল। আমার হাতটি ভেঙে গেল। শিক্ষকেরা যখন আমাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য রওনা হলেন, তখন আমি মায়ের উত্তমমধ্যমের ভয়ে মূর্ছা গেলাম। যখন আমার জ্ঞান ফিরল, দেখলাম আমি হাসপাতালে এবং আমার সামনে বাবা বসে আছেন। বাবাকে বললাম, ‘বাবা তুমি প্লিজ মাকে আমার হাতের ব্যথার কথা কিচ্ছু বলো না।’ বাবা অবাক হয়ে বললেন, ‘আজ তিন দিন পর তোমার জ্ঞান ফিরেছে, তোমার মা তোমার চিন্তায় তিন দিন ধরে কিছুই খায়নি, একটুও ঘুমায়নি। তোমার মা এতটাই অসুস্থ পড়েছে যে গতকাল তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। স্যালাইন দিয়ে, ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।’ আমি বললাম, ‘মা কোথায়?’ বাবা বললেন, ‘তোমার পাশের রুমে অ্যাডমিটেড।’

আমি তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করলাম, কিন্তু দেখলাম আমার বাঁ হাতের ওপর আমার চেয়েও বড় আকারের এক ব্যান্ডেজ। কান্নাকাটি জুড়ে দিলাম মায়ের কাছে যাব বলে। পড়ে বাবা আমাকে কোলে করে মায়ের কাছে নিয়ে গেলেন। দেখলাম, মায়ের চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছে, চুল উষ্কখুষ্ক হয়ে আছেন। মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘কেন হাইবেঞ্চের ওপর উঠতে গেলি? কী দরকার ছিল অত ওপরে ওঠার? যদি না উঠতি, আজকে এতটা কষ্ট পেতি?’ আমি চুপচাপ শুনে গেলাম মায়ের বকুনি, আজ আর রাগ করলাম না। কারণ এই বকুনির মধ্যে ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও অকৃত্রিম ভালোবাসা; মায়ের ভালোবাসা।
দেবপাহাড়, চট্টগ্রাম।
অনিন্দিতা মিমি
১১ মে ২০১৬, ০১:৪৮
আপডেট: ১১ মে ২০১৬, ০১:৪৯ 
Image Source: Internet

©All content on this blog is protected by copyright law. Unauthorized use, reproduction, or distribution of any articles without permission is strictly prohibited. Legal action may be taken against violators.

No comments:

Post a Comment

তুলনা

 তুলনা করে কথা বলাটা আমি প্রচন্ড ঘৃণা করি..... এই তুলনা করার মত ঘৃণ্য কাজ, ভাই-বোনের সম্পর্ক, বাবা-মায়ের সম্পর্ক, পৃথিবীর সব পবিত্র সম্পর্কক...