Sunday, November 15, 2020

আমার প্রথম প্রেম......

প্রথম সৌমিত্র চ্যাটার্জির প্রেমে পড়ি যখন দেখি, অপু তার নিজের ওপর অভিমান করে অপর্ণার সাথে জোড় করে ঝগড়া করছিল.... তখন আমার বয়স হয়তো ৪ কি ৫.... এত মিষ্টি হাসিটা.... কতবার যে প্রেমে পড়েছি ওই হাসিটার.... তাঁর হাজারো সাক্ষাৎকার দেখেছি বার বার ওই হাসিটা দেখার জন্য.... 

কখনো বা বসন্ত বিলাপের শ্যাম, সোনার কেল্লা-জয় বাবা ফেলুনাথ এর ফেলুদা, চারুলতার অমল, পরিনীতার শেখর, আবার কখনো বা ঝিন্দের বন্দির ময়ূরবাহন, বেলাশেষের বিশ্বনাথ মজুমদার বেশে ভালবেসে গিয়েছেন সিনেমাকে..... চরিত্রগুলোর দৃশ্যায়ন বারবার দেখেছি শুধু ওই ভূবন ভোলানো হাসিটার জন্য..... 

গান যেমন সুর হারালে নিষ্প্রাণ, তেমনই কবিতা তার কণ্ঠ হারালেও মলিন...... আজ বাংলা সিনেমা তাঁর কবিতার কণ্ঠ ও ছন্দকে হারালো..... একে একে অনেক নক্ষত্র হারিয়ে যাচ্ছে.... ইতিহাসও তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলছে..... একটি যুগের অবসান হলো আজ.... উত্তম-সৌমিত্র যুগের অবশেষে অবসান হয়ে গেল আজ.... 

খুব ইচ্ছে ছিল, জীবনে একবার হলেও এই মানুষটির সাথে দেখা করবো.... হয়তো আমার ইচ্ছেতেই প্রাণ ছিল না, তাই অপূর্ণ রয়ে গেল.... পরপারে ভালো থাকুক এই নক্ষত্রগুলো...


Image Source: Internet ©All content on this blog is protected by copyright law. Unauthorized use, reproduction, or distribution of any articles without permission is strictly prohibited. Legal action may be taken against violators.

Wednesday, August 12, 2020

বিষাক্ত দৃষ্টিভঙ্গি

 ~গল্প~

বেশ কয়েক বছর হচ্ছে বাস স্ট্যান্ডটি হয়েছে রাস্তার মোড়ে। নানান রকম মানুষের আড্ডাখানা সেখানে। দিনের অর্ধেক সময়ই ওখানে কিছু আজেবাজে ছেলে দাঁড়িয়ে থাকে। তাই অল্প বয়স্ক মেয়েরা সেই বাস স্ট্যান্ডটি ব্যবহার করতে পারে না। সেখানে থাকা মানুষগুলোর চাহনিতে কেমন জানি একটা বিষাক্ততা।


আজ বাস স্ট্যান্ডটিতে একজন মা তার ৫মাসের বাচ্চাটিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, বাচ্চাটি প্রচন্ড কাঁদছে খিদেয়! বাচ্চাটিকে অনেক ভাবে থামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন মা, কিন্তু দুধের শিশু কি আর বুঝে তাকে খেতে কেন দিতে পারছেন না তার মা? আশেপাশের মানুষগুলো তাঁর দিকে কেমন একটা নজরে যেন তাকাচ্ছে। যেই নজরটাকে আর যাই হোক ভালো নজর বলা যায় না। 

অনেকক্ষণ কোন বাস আসে না, কি হয়েছে কে জানে। বাচ্চাকে নিয়ে এভাবে দাড়িয়েও থাকা যাচ্ছে না। সময় যত এগোচ্ছে বাচ্চার কান্না আরো বেড়ে যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে বাস স্ট্যান্ডে কিছু স্কুলের ছাত্র এসে দাড়ালো বাসের জন্য। তারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে গল্প করছে। 

মা ঠিক করলেন, বাচ্চার কান্না যেভাবে হোক থামাতে হবে। তিনি তার বাচ্চাকে নিয়ে বাস স্ট্যান্ডের এক কোণায় একটি চেয়ারে গিয়ে বসলেন। নিজেকে যথেষ্ট আড়াল করে বসলেন আশেপাশের লোকদের থেকে। 

অবশেষে বাচ্চাটির কান্না থামলো। কিন্তু  আশেপাশের মানুষদের সেই বিষাক্ত নজরের দৃষ্টিগুলো যেন থামছেই না।  একজন লোক টিটকারি মেরে বললো, "আমাদেরকেও একটু দেখাও না বাপু" -বলেই খুব জোড়ে হেসে উঠলো, এবং সাথে আশেপাশের বিষাক্ত নজরের মানুষগুলো বললো, "আমরাও বা বাদ যাই কেন?" 

সেই মা এমন সব মন্তব্যে প্রচন্ড আহত হলো। তাঁর খুব কান্না পাচ্ছিল। 

ওদিকে হট্টোগল শুনে স্কুলের ছেলেগুলো ফিরে তাকালো এবং বোঝার চেষ্টা করলো কি হচ্ছে ওখানটায়!  

সেই লোকগুলো আরো কিছু খারাপ খারাপ মন্তব্য করলো। স্কুলের ছেলেগুলো তা দেখার পর এগিয়ে গেল। 

-কি? কি সমস্যা এখানে?

লোক গুলো তাদের দিকে ফিরে তাকালো। 

-কিছু না,  তোমরা স্কুলে যাও, এইখানে তোমাদের কোন কাম নাই। 

-আপনারা মহিলাটাকে এসব কি বলতেছেন? আপনাদের মা বোন নাই? 

-তোমরা ছোট, বড়দের ব্যাপারে নাক গলাইয়ো না।

-এটা কিসের বড়দের ব্যাপার? একজন মা তার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে আর আপনারা উনাকে একা পেয়ে আজে বাজে কথা শোনাচ্ছেন? নিজের মা ওই যায়গায় থাকলে আপনারা কি করতেন? আপনাদের নিজের মেয়ের সাথে এরকম কিছু হলে কি করতেন আপনারা? 


বিষাক্ত নজরগুলো হঠাৎ বিষহীন হয়ে পড়লো, কিন্তু দাম্ভিকতা এতটুকু কমলো না। 

তারা কিছু বলতে পারলো না। তাই যে যার স্থানে ফিরে এমন একটা ভাব করতে লাগলো, যেন কিছুই হয়নি এতক্ষণ এখানে। 

ছেলেগুলো সেই মাকে চারিদিকে ঘিরে রেখে রক্ষাকবচের মত একটি বলয় তৈরী করলো, যেই কবচে তাদের সেই বিষাক্ত নজরগুলো কখনো অতিক্রম করতে পারবে না। 

- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -

১. কেন সেই বাস স্ট্যান্ডটিতে অল্প বয়স্ক মেয়েরা দাড়াতে পারে না সেখানে থাকা আর দশজন মানুষের সাথে? 

২. কেন সেই মাকে আশেপাশের মানুষের "আড়ালে"  বসে নিজের বাচ্চাকে দুধ পান করাতে হবে? 

৩. কেন সেই স্কুল পড়ুয়া ছাত্রগুলোর, আর দশটা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ থেকে একজন মাকে বাঁচাতে রক্ষাকবচ তৈরী করতে হবে? 


এইসকল "কেন" -এর একটাই উত্তর।  

-কারণ আমরা নিরাপদ না!  না নিরিবিলিতে না জনপদে।

-কারণ আমাদের নজর এখনো বিষে ভরা।

-কারণ আমরা আজও নিজেরা নিজের মা বোনদের সমাজে নিরাপদে চলতে দিতে পারি না! 


©All content on this blog is protected by copyright law. Unauthorized use, reproduction, or distribution of any articles without permission is strictly prohibited. Legal action may be taken against violators.


Tuesday, May 19, 2020

অবরুদ্ধ প্রেম

ত্রিদিব তিলোত্তমা, একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। একে অপরকে প্রচন্ড ভালবাসে। তাদের ঘুরতে যাওয়া বলতে ভার্সিটির ক্যান্টিন, টঙে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা আর মাঝে মাঝে পিকনিকের কোন আয়োজন হলে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া।

কিন্তু হঠাৎ কি যেন হয়ে গেল, পৃথিবী ছেয়ে গেল এক বিষাক্ত মহামারীতে। যা কুড়ে কুড়ে খেয়ে নিচ্ছে শত কোটি প্রাণ। পৃথিবীর প্রায় ৮০শতাংশ অঞ্চল অবরুদ্ধ ঘোষণা করে দিল।
তিলোত্তমা একদমই ঘরের বাইরে বের হয় না। আর ওদিকে ত্রিদিব খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কারণ তাঁদের এলাকার ত্রাণকার্য পরিচালনার দায়িত্ব পড়েছে তার কাঁধে।

তিলোত্তমার ত্রিদিবের ওপর ভীষণ রাগ চেপেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে, লোকসমাগম এড়িয়ে চলার। আর এই পরিস্থিতিতে ছেলেটা ঘরে ঘরে গিয়ে ত্রাণ সংগ্রহ করছে এবং গরীব দুঃখীদের ত্রাণ বিতরণ করছে।

তিলোত্তমা স্বার্থপরের মত ত্রিদিবকে বকছে;
- হ্যালো
- কি?! আমার ময়না পাখি এখনো আমার ওপর রাগ করে আছে? (দুষ্টুমির ছলে)
- ভাল লাগছে না এখন এসব দুষ্টুমি। (বিরক্তি ও অভিমান নিয়ে)
- আচ্ছা বাবা সরি। বলো কেমন আছ?
-বলছি কি সবকিছুতেই তোমার বাড়াবাড়ি। কেন এই মহামারীর মধ্যে  ত্রাণকার্য পরিচালনার দায়িত্বটা তুমি নিতে গেলে? (বকছে মত করে)
-কি করবো বলো? এই অবরুদ্ধ শহরে গরীব দুঃখী মানুষগুলো তো না খেতে পেয়ে মরে যাবে!
-আর তুমি? জানো না এই রোগটি মারাত্মক ছোঁয়াচে। তোমার নিজের জীবনের মায়া নেই?
-আমরা যদি গরীব দুঃখীদের পাশে না দাড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে বলো?

আজ তিলোত্তমা স্বার্থপরের মত ত্রিদিবকে এই সমাজসেবা থেকে দূরে রাখতে চাইছে। অনেক স্বপ্ন বুনে ফেলেছে তিলোত্তমা ত্রিদিবকে নিয়ে। এই স্বপ্ন ভবিষ্যতে একই সাথে জীবনের দীর্ঘ পথে হাতে হাত রেখে চলার স্বপ্ন। তাই সে তার ভালবাসার মানুষকে এই মৃত্যুর মিছিল থেকে সহস্র যোজন দূরে রাখতে চাইছে।

©All content on this blog is protected by copyright law. Unauthorized use, reproduction, or distribution of any articles without permission is strictly prohibited. Legal action may be taken against violators.


তুলনা

 তুলনা করে কথা বলাটা আমি প্রচন্ড ঘৃণা করি..... এই তুলনা করার মত ঘৃণ্য কাজ, ভাই-বোনের সম্পর্ক, বাবা-মায়ের সম্পর্ক, পৃথিবীর সব পবিত্র সম্পর্কক...