এই মাইয়া, চুল বেঁন্ধে বাইর হও নাই কেন? চুল বাঁন্ধো

 আপনারা টিপ নিয়ে কথা বলছেন... চুল খুলে পর্যন্ত হাঁটা যায় না রাস্তায়....

 

আমরা আগে যে এলাকায় থাকতাম অত্যন্ত কট্টর একটা এরিয়া ছিল.... তো যেদিনের (২০১৫ এর দিকে সম্ভবত) ঘটনা বলছি এর কিছুদিন আগে আমি চুল কেটেছিলাম, বেশ ছোটই করেছিলাম....  তো স্নান করে একটা স্যারের ক্লাসে যাচ্ছিলাম....বাবাসহই বের হয়েছিলাম..... যা হোক,

স্নান করেই বেরিয়ে গিয়েছি বলতে গেলে, যার কারণে চুল বেশ ভেজা ছিল.... তাই ভেজা চুল বাঁধার প্রশ্নই ওঠে না.....

একজন বয়স্ক ভদ্রলোক আমাকে দেখে আমার বাবার সামনেই অত্যন্ত কর্কশ কণ্ঠে বলে উঠলেন, "এই মাইয়া, চুল বেঁন্ধে বাইর হও নাই কেন? চুল বাঁন্ধো(প্রচন্ড ধমকের সুরে)"  এরপর তিনি নিজ মনে বিড়বিড় করতে লাগলেন "আজকালকার মাইয়া ফুয়া হক্কলের চালচলন দেখিলে গা জ্বলি যায়,  টিপ ফড়ি, চুল হুলি, এঈন কিরিম্মা চালচলন" - আমার অপরাধ আমি ভেজা চুল খুলে দিয়েছি, আর হ্যা টিপ পড়েছি😊

আমি কপাল কুঁচকে কথাটা এড়িয়ে যাব ভাবছি এমন সময় আমার মাথা তিনগুন আগুন করে দিল আমার বাবা; ওই ভদ্রলোকের সামনেই আমাকে ধমকের সুরে বললেন, "চুল বেঁধে বের হও নাই কেন" 

একে তো ওই লোকের উপর ক্ষোভ আর আমার বাবার উপর রাগ -এই দুই ইমোশনের মিশেলে মেজাজের অবস্থা ভয়াবহ তিরিক্ষি.....

আমি ভাবলাম আমি যদি মুসলিমও হতাম আমি চুল খোলা রাখবো না বাঁধবো এটা নিয়ে ৩য় কোন ব্যক্তির কথা বলার প্রয়োজন নেই.... এটা যার যার স্বাধীনতা,  যার যার ইচ্ছা.... এই যায়গাটায় কারোর হস্তক্ষেপের কোন প্রশ্নই ওঠে না.... আর এটাও ভাবলাম, নারী হয়ে জন্মিয়েছি বলে আমার এতই আকাল পড়লো যে একজন পুরুষ (সে ঘরের পুরুষ হোক বাইরের পুরুষ হোক), আমাকে চুল বাঁধবো না খোলা রাখবো এই বিষয়টাতে হস্তক্ষেপের অলিখিত লাইসেন্স পেয়ে যাবে?

আমি ভাবলাম না, এটা হতে দিলে সামনে আমি কি লিপ্সটিক পড়বো, কি কানেরদুল পড়বো তাতেও হস্তক্ষেপ আসবে.... তাই আমি সেখানটাতেই দাঁড়িয়ে গলা যথেষ্ট উঁচু করে (যেন সেই ভদ্রলোক শুনতে পারে এবং আমার বাবাও যেন এই বিষয়টা নিয়ে আর দ্বিতীয়বার আমাকে ঘাটানোর সুযোগ না পায়), বললাম, "আমার মাথা, আমার চুল আমি যেভাবে ইচ্ছা বাঁধবো, কারোর বাপ এসে আমাকে বলতে পারবে না আমি কি করবো না করবো, এমনকি আমার নিজের বাপও বলতে পারবে না"

আমি অন্যের কথা কি বলবো যেখানে আমার ঘরের মানুষই আমাকে বাইরের একজন অপরিচিতর সামনে অপদস্থ হতে দেখে চুপ করে থাকে, এমনকি সেই অপরিচিতর সামনে অপদস্থ করে.....

আমরা নারীর ক্ষমতায়নে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি নিঃসন্দেহে, কিন্তু ছোট ছোট অনেক বিষয়ে ঘরে বাইরে প্রতিটা নারী প্রতিনিয়ত অপদস্থ হচ্ছি.....

Image Source: My Album ©All content on this blog is protected by copyright law. Unauthorized use, reproduction, or distribution of any articles without permission is strictly prohibited. Legal action may be taken against violators. This image is protected by copyright law and may not be used for any explicit or sexual purposes. Unauthorized use for such content is strictly prohibited and may result in legal action. Respect the terms of use to avoid infringement.

এই চড় যদি আমরাও মারতে পারতাম

বয়ঃসন্ধিকাল থেকে হরমোনাল ইমব্যালেন্সের দরুণ আমি অনেক ওভার ওয়েটেড হয়ে যাই, শুধু তা-ই নয় আমার গাল, গলায়, জামি, আপার লিপ এরিয়াতে অবাঞ্চহিত লোম দেখা দেয় সেই টিনএজ থেকে.... আমি প্রাউডলি এটাকে গ্রহণ করে নিয়েছি.... আমার পরিবার থেকে ইতমধ্যে বেশ কয়েকবার লেজার ট্রিটমেন্ট এর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বাট আমি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে জানতে পেরেছি একটা সময় পর এসব চলে যাবে.... আর যদি না যায়, তাহলে চিকিৎসা করা যেতে পারে, রিস্কের পরিমাণ কম.....

 এই যে শারীরিক কষ্ট গুলো না অনেকাংশে বেড়ে যায় মনের কিছু কষ্ট যখন এতে যোগ দেয়....  

 "কিরে, তুই কি ছেলে হয়ে যাচ্ছিস?"

"কিরে, তোকে দেখলে মনে হয় ৩বাচ্চার মা"

"এত বড় শরীর নিয়ে যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাস, ওই এলাকায় আগে থেকে কোন ভূমিকম্প বার্তা দিয়ে যাস না?"

বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না এই কথাগুলো শোনা লাগে আমাকে প্রতিনিয়ত.....  

আমি অবাক হয়ে যাই যারা ফিগার নিয়ে এরকম যাচ্ছে তাই কমেন্ট করে বেড়ায় তারাই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়, "Body-shaming should be stopped", মানে ভন্ডামি আর কোথায় কোথায় দেখানো বাকী? অথচ তাদের ঘরেও মা আছে, তাঁরাও বার্ধক্যজনিত কারণে স্থূলাকার ধারণ করেছেন.... হায়রে দুর্ভাগা মা, যদি জানতে পারতো তার ছেলে অন্যের ফিগার নিয়ে কমেন্ট করে বেড়ায়, তাহলে কত কষ্টই না পেত

 আর পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের কথা কখনো শুনেছেন?

এই লিঙ্কে দেখে নিতে পারেন.....

আর আমি বরাবরই LGBTQ কমিউনিটিকে সমর্থন করি.... কারণ তাঁদের এমন ভিন্নতা তাঁদের নিজেদের ইচ্ছায় হয় না, এটা সম্পূর্ণ ঈশ্বর প্রদত্ত.... আপনি তাঁদের অবমাননা করছেন মানে, ঈশ্বরের সৃষ্টিরও অবমাননা করছেন..... আর এটা বিজ্ঞান দ্বারাও প্রমাণিত.....হাতে হাতে নিশ্চয় স্মার্টফোন আছে, গুগল করে দেখুন তাঁদের এই ভিন্নতার ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিয়েছে.... Click here  

আপনার মোটা মস্তিষ্কে আবার এই ধারণা ঢুকাইয়েন না, “এই মেয়ে LGBTQ সমর্থন করে মানে শিউর নাস্তিক” আমি আস্তিক না নাস্তিক এটার ব্যাখ্যা দিলেও আপনার মোটা মাথায় ঢুকবে না, তবে এইটুকু আপনাকে জানিয়ে রাখি আমি ধর্মভীরু, ধর্মান্ধ নই....আজ Will Smith এর স্ত্রীর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছে, বলে ঠাটিয়ে যে চড়টা মেরেছে, এরকম ঠাটিয়ে চড় যদি আমায় কমেন্ট পাস করা সকল মানুষকে মারতে পারতাম তাহলে বুঝিয়ে দিতে পারতাম কত ধানে কত চাল..... 

Image Source: Internet ©All content on this blog is protected by copyright law. Unauthorized use, reproduction, or distribution of any articles without permission is strictly prohibited. Legal action may be taken against violators.